শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৭:৩৩ অপরাহ্ন

খুলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, খুশি শিক্ষার্থীরা

খুলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, খুশি শিক্ষার্থীরা

স্বদেশ ডেস্ক:

২১ ফেব্রুয়ারির পর যে কোনো দিন খুলে দেওয়া হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর শিক্ষামন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে তাদের মতামতসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। করোনা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সঙ্গে সভা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তিনি গতকাল বুধবার চাঁদপুরে এক অনুষ্ঠানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কথা জানান।

সরকারের শীর্ষ মহল থেকে এমন ঘোষণায় খুশি শিক্ষার্থীদের পরিবার। করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ থাকছে সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ২১ জানুয়ারি থেকে এ বন্ধ চলছে। দুই সপ্তাহ ধরে করোনা সংক্রমণের হার নিম্নগতি হওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার চিন্তা করছে সরকার।

বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা ক্লাস শুরু করতে প্রস্তুত। এর আগেও তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস পরিচালনা করেছেন। অনুষ্ঠিত হয়েছে দুটি পাবলিক পরীক্ষাও। এখন সংক্রমণের হার যাই থাকুক না কেন, স্বাস্থ্যবিধি যথাযথ পালনের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন শিক্ষাবিদরা। একই সঙ্গে সরাসরি ক্লাস কার্যক্রমে ফিরে যাওয়ার তাগিদ দিয়েছেন তারা।

শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হলে আগের মতোই স্বাস্থ্যবিধি পালনের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হবে। প্রতিষ্ঠানের ভেতরে-বাইরে আগের চেয়ে কড়াকড়ি আরোপ করা হবে। এর আগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পালন করা হয়েছিল। কিন্তু বাইরে অভিভাবকরা স্বাস্থ্যবিধি মানেননি। অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে বিপুলসংখ্যক অভিভাবক নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখেননি। ফের স্কুল শুরু হলে এই বছরের পাবলিক পরীক্ষার্থীদের ক্লাস বেশি থাকবে। অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে একদিন করে রুটিন অনুযায়ী ক্লাসে যাবে।

গতকাল চাঁদপুরে এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, চলতি মাসেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হবে। তিনি বলেন, এখনো তারিখ নির্ধারণ হয়নি। আজ (বুধবার) রাতেই জাতীয় পর্যালোচনা কমিটির সঙ্গে এ নিয়ে সভা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও এ নিয়ে কথা বলব। তবে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

এর আগে গত রবিবার এইচএসসির ফল ঘোষণার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ মাসের শেষের দিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার আশা প্রকাশ করেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, আমরা মনে করছি না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি আর বাড়ানোর দরকার রয়েছে। কারণ করোনা নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ এই দুই মন্ত্রীর বক্তব্যে স্বস্তি ফিরেছে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মাঝে।

সেগুনবাগিচা উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সিদ্ধার্থ জানায়, গত দুই বছরে মাত্র এক-দেড় মাস ক্লাস করার সুযোগ হয়েছিল। পরীক্ষা দিতে হয়নি। নতুন বই পেয়েছে এ বছর। এখনো ক্লাস শুরু হয়নি। বাড়িতে অনলাইন ক্লাসে তার মন বসে না। অপেক্ষা করছে কবে ক্লাসে যেতে পারবে।

তার বাবা আনোয়ারুল কবির জানান, স্কুল বন্ধের কারণে বাসার লেখাপড়াও বন্ধ। আমরাও চাই ছেলেমেয়েরা আগের মতোই ক্লাস ফিরে যাক।

সিদ্ধার্থের মতোই ক্লাসে যেতে মুখিয়ে আছে বাংলাবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাবাসুম লামিয়া। স্কুল খুলে দেওয়া হবে- খবর শুনেই খুশি সে। ফোনে যোগাযোগ করছে বন্ধুদের সঙ্গে।

সেগুনবাগিচা হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক একেএম ওবায়দুল্লাহ বলেন, স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি এখন আর নতুন নয়। আমরা এটিতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। ক্লাস নেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত। আমাদের ছেলেমেয়েরা ক্লাস আসবে। সরাসরি পাঠদান হবে। বিদ্যালয় আঙিনায় কোলাহল থাকবে- এটি তো একটি শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ। এখন ভালো লাগে না। মাঠের দিকে তাকালে খুব কষ্ট হয়। কোথাও যেন একটা শূন্যতা রয়ে গেল।

এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সরকার জানাবে। এখন নতুন কোনো রুটিন হয়নি। তবে আশা করি খোলার পর আগের মতো যারা পরীক্ষার্থী আছে, বিশেষ করে এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের তাদের ক্লাসে আনা হবে। বাকি শ্রেণির সপ্তাহে একদিন করে ক্লাস হবে। এর পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পর্যায়ক্রমে সব শ্রেণির ক্লাসের সংখ্যা বাড়ানো হবে। তবে আমরা স্বাস্থ্যবিধি যথাযথ পালনের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেব।

বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, আমরা চাই দ্রুত স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরাসরি ক্লাস চালু করা হোক। আশা করছি, এ মাসের শেষের দিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে যাবে। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে গেলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রতি প্রত্যেককে সতর্ক থাকতে হবে। কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের অবহিত করবেন, সচেতন করবেন।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া হলেও করোনা প্রতিরোধে সব প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে মাস্ক সরবরাহ করার পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, হ্যান্ড স্যানিটাইজারও যেন প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য স্বউদ্যোগেই রাখে। আর আগের মতো আবারও তাপমাত্রা স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়। এখনো যারা টিকা নেননি তাদের টিকা নিতে হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877